ময়লা বিষয়ে অভিযোগ পাচ্ছি। আগামী ১৫ দিনে ঠিক না হলে ব্যবস্থা। চট্টগ্রাম সিটি মেয়র

মোঃ সিরাজুল মনির,
চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান
বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহে ‘ডোর টু ডোর’ প্রকল্পে যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পেয়েছে তারা ‘ইফেক্টিভলি’ কাজ না করলে তাদের বাদ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের (বেসরকারি প্রতিষ্ঠান) কার্যক্রম দেখবেন জানিয়ে তিনি বলেন, যদি ঠিকভাবে সেবা না পাই বন্ধ করে দেব। কয়েকটি জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছে, ঠিকভাবে ময়লা পরিষ্কার করা হচ্ছে না। আরো এক মাস দেখব। টেন্ডারের মাধ্যমে যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা যদি ইফেক্টিভলি ময়লা ক্লিন করতে না পারে তাদের বাদ দেব। ডোর টু ডোর প্রকল্পটিই বন্ধ করে দেব। বাসিন্দারা নিজ নিজ ভবনের ময়লা নিচে নিয়ে আসবে। আমরা আমাদের সিটি কর্পোরেশনের রুলস অনুযায়ী যেখান থেকে ময়লা নেয়ার সেখান থেকে নিয়ে আসব। যেভাবে আগে নেয়া হতো সেভাবে নিব।
লালদিঘি পাবলিক লাইব্রেরির সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের সচিব মো. আশরাফুল আমিন ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
মেয়র চসিকের পরিচ্ছন্নকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, একের পর এক অভিযোগ বাড়ছে। এখন মনে হয় সেটা (বেসরকারিভাবে পরিচালিত ডোর টু ডোর কার্যক্রম) বন্ধ করে দিয়ে আগে আপনারা (পরিচ্ছন্নকর্মী) যেভাবে কাজ করতেন সেভাবে করতে হবে। এ সময় চসিকের আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের বলেন, আপনারা এক মাস স্টংলি ড্রাইভ দেন। যদি দেখি ডোর টু ডোর সুফল আসছে না, তাহলে বন্ধ করে দেব। ডোর টু ডোর এবং এদের (চসিকের পরিচ্ছন্নকর্মী) অ্যাক্টিভিটিস দেখেন।
চসিকের পরিচ্ছন্নকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, একটা প্রোগ্রাম থেকে এসেছি। সেখানে অনেক জায়গায় ময়লা পড়ে থাকার অভিযোগ পেয়েছি। ডোর টু ডোরে যারা আছে তারা ফেল করলে আপনারা (চসিকের পরিচ্ছন্নকর্মী) আছেন কেন? আমরা তাদের (ডোর টু ডোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান) দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। ময়লাগুলো পরিষ্কার করা আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব। তারা (ডোর টু ডোরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা) নিচ্ছে না বলে আপনারাও নিবেন না সেটা হতে পারে না। আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছি, এরপর আপনাদের চমৎকার কাজ দেখেছি। এরপর আপনারা আস্তে আস্তে স্লো হয়ে গেছেন কেন?
ডা. শাহাদাত বলেন, ডোর টু ডোর, ওদের আনছিলাম আপনাদের সাহায্য করার জন্য। এখন দেখছি আপনারা গা ছাড়া দিয়েছেন। ময়লা দেখছেন, কিন্তু আনছেন না। আমি কিন্তু এবার অ্যাকশনে যাব। যে ওয়ার্ডে ময়লা দেখব, ক্লিন করতে পারছে না, সে ওয়ার্ডের সব পরিচ্ছন্নকর্মীকে বদলি করে দেব।
তিনি বলেন, আমি কাজ চাই, আমার শহর পরিষ্কার চাই। ডোর টু ডোর কি করছে না করছে ওটা আপনারা দেখবেন না। এদের সমস্যা হলে এদেরকে আমি ক্যান্সেল করব। কিন্তু আমার যারা কর্মকর্তা আছেন, তারা কোথাও ময়লা দেখলেই ক্লিন করতে হবে।
মেয়র বলেন, এতদিন জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান করা নিয়ে ছিলাম। এখন ক্লিন সিটি করা নিয়ে আছি। শহর পরিষ্কার থাকতে হবে। আমি কিন্তু সরেজমিনে দেখার জন্য রাতে ভিজিট করব। এ সময় পরিচ্ছন্নকর্মী কম দেখতে পেলে কিন্তু অ্যাকশনে চলে যাব। প্র্যাক্টিক্যালি যদি কোনো পরিচ্ছন্নকর্মীকে না দেখি তাহলে ধরে নেব, তারা স্বাক্ষর করে চলে যায়, কাজ না করে টাকা নেয়; যেটা লোকমুখে শুনি সেটা বাস্তবে ধরে নিব। কাজেই এ ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবেন।
পরিচ্ছন্নকর্মীদের মেয়র বলেন, আমি ফ্যাসিলিটি বাড়িয়ে দেব। ধীরে ধীরে স্থায়ী করছি। কিন্তু আপনাদের কাজের গতিও বাড়াতে হবে। পরিচ্ছন্ন বিভাগকে আরো অ্যাক্টিভ হতে হবে। তিনি বলেন, ময়লা অপসারণ নিয়ে আমি এখনো সন্তুষ্ট না। ডোর টু ডোরের যারা কাজ পেয়েছে তাদের কাজ করতে এক দেড় মাস সময় লাগবে। এরা আছে বলে আপনার চুপ মেরে থাকবেন তা হয় না। কোনো এক জায়গায় ময়লা দেখলে আপনাদের নিয়ে আসতে হবে।
মেয়র বলেন, আমি শুনেছি, অনেক জায়গা থেকে আপনারা ডাস্টবিন নিয়ে এসেছেন। অনেকে আমাকে বলেছে, আগে ডাস্টবিন ছিল এখন নেই, আমরা ময়লা ফেলতে পারছি না। ডোর টু ডোর দেওয়ার কারণে আপনারা ডাস্টবিন নিয়ে আসবেন? ডাস্টবিন ডাস্টবিনের জায়গায় থাকবে। কেউ না কেউ তো ময়লাগুলো ফেলবে এক জায়গায়। কোথায় ফেলবে? কাজেই যে যে ওয়ার্ডে আপনারা ডাস্টবিন সরিয়েছেন, আপনারা ওই স্ব স্ব জায়গায় ডাস্টবিনগুলো দিয়ে আসবেন। আমি চাই, কোনো কারণে ডোর টু ডোর ফেল করলে আপনাদেরকে সেখানে কাজ শুরু করতে হবে। কারণ ডোর টু ডোরের লোকগুলো আমার কর্মকর্তা না। আপনারাই আমার। আপনারা আমার মেইন ফোর্স, যারা এই শহরটাকে সুন্দর রাখবেন। এখানে যদি আমি ফেল করি তাহলে আমি ফেল।
শাহাদাত বলেন, আমাদের পরিচ্ছন্নকর্মী তিন হাজার ৮৮০। প্রায় চার হাজারের কাছাকাছি এসব পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা–কর্মচারী যদি ওয়ার্ডভিত্তিক ঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে কিন্তু ময়লা থাকার কথা না। তিনি বলেন, ময়লা নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় পড়ে যাচ্ছে। আমি নিজে দেখেছি, গাড়ির উপর কাভার নেই। ময়লার গাড়ির উপর কাভার থাকবে না কেন? কেন যেতে যেতে ময়লা রাস্তায় পড়বে? দিন শেষে ওই ময়লাগুলো তো নালায় যাচ্ছে।
সভায় প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, জনবল পর্যাপ্ত থাকলেও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে গতি আনতে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির ঘাটতি আছে। তাছাড়া কার্যক্রম তদারকির জন্য নির্দিষ্ট গাড়ির অভাবেও অনেক সময় কাজে বিঘ্ন ঘটে।