| ৮ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনামঃ

ময়লা বিষয়ে অভিযোগ পাচ্ছি। আগামী ১৫ দিনে ঠিক না হলে ব্যবস্থা। চট্টগ্রাম সিটি মেয়র

ময়লা বিষয়ে অভিযোগ পাচ্ছি। আগামী ১৫ দিনে ঠিক না হলে ব্যবস্থা। চট্টগ্রাম সিটি মেয়র

মোঃ সিরাজুল মনির,

চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান

বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহে ‘ডোর টু ডোর’ প্রকল্পে যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পেয়েছে তারা ‘ইফেক্টিভলি’ কাজ না করলে তাদের বাদ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের (বেসরকারি প্রতিষ্ঠান) কার্যক্রম দেখবেন জানিয়ে তিনি বলেন, যদি ঠিকভাবে সেবা না পাই বন্ধ করে দেব। কয়েকটি জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছে, ঠিকভাবে ময়লা পরিষ্কার করা হচ্ছে না। আরো এক মাস দেখব। টেন্ডারের মাধ্যমে যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা যদি ইফেক্টিভলি ময়লা ক্লিন করতে না পারে তাদের বাদ দেব। ডোর টু ডোর প্রকল্পটিই বন্ধ করে দেব। বাসিন্দারা নিজ নিজ ভবনের ময়লা নিচে নিয়ে আসবে। আমরা আমাদের সিটি কর্পোরেশনের রুলস অনুযায়ী যেখান থেকে ময়লা নেয়ার সেখান থেকে নিয়ে আসব। যেভাবে আগে নেয়া হতো সেভাবে নিব।

লালদিঘি পাবলিক লাইব্রেরির সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের সচিব মো. আশরাফুল আমিন ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।

মেয়র চসিকের পরিচ্ছন্নকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, একের পর এক অভিযোগ বাড়ছে। এখন মনে হয় সেটা (বেসরকারিভাবে পরিচালিত ডোর টু ডোর কার্যক্রম) বন্ধ করে দিয়ে আগে আপনারা (পরিচ্ছন্নকর্মী) যেভাবে কাজ করতেন সেভাবে করতে হবে। এ সময় চসিকের আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের বলেন, আপনারা এক মাস স্টংলি ড্রাইভ দেন। যদি দেখি ডোর টু ডোর সুফল আসছে না, তাহলে বন্ধ করে দেব। ডোর টু ডোর এবং এদের (চসিকের পরিচ্ছন্নকর্মী) অ্যাক্টিভিটিস দেখেন।

চসিকের পরিচ্ছন্নকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, একটা প্রোগ্রাম থেকে এসেছি। সেখানে অনেক জায়গায় ময়লা পড়ে থাকার অভিযোগ পেয়েছি। ডোর টু ডোরে যারা আছে তারা ফেল করলে আপনারা (চসিকের পরিচ্ছন্নকর্মী) আছেন কেন? আমরা তাদের (ডোর টু ডোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান) দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। ময়লাগুলো পরিষ্কার করা আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব। তারা (ডোর টু ডোরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা) নিচ্ছে না বলে আপনারাও নিবেন না সেটা হতে পারে না। আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছি, এরপর আপনাদের চমৎকার কাজ দেখেছি। এরপর আপনারা আস্তে আস্তে স্লো হয়ে গেছেন কেন?

ডা. শাহাদাত বলেন, ডোর টু ডোর, ওদের আনছিলাম আপনাদের সাহায্য করার জন্য। এখন দেখছি আপনারা গা ছাড়া দিয়েছেন। ময়লা দেখছেন, কিন্তু আনছেন না। আমি কিন্তু এবার অ্যাকশনে যাব। যে ওয়ার্ডে ময়লা দেখব, ক্লিন করতে পারছে না, সে ওয়ার্ডের সব পরিচ্ছন্নকর্মীকে বদলি করে দেব।

তিনি বলেন, আমি কাজ চাই, আমার শহর পরিষ্কার চাই। ডোর টু ডোর কি করছে না করছে ওটা আপনারা দেখবেন না। এদের সমস্যা হলে এদেরকে আমি ক্যান্সেল করব। কিন্তু আমার যারা কর্মকর্তা আছেন, তারা কোথাও ময়লা দেখলেই ক্লিন করতে হবে।

মেয়র বলেন, এতদিন জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান করা নিয়ে ছিলাম। এখন ক্লিন সিটি করা নিয়ে আছি। শহর পরিষ্কার থাকতে হবে। আমি কিন্তু সরেজমিনে দেখার জন্য রাতে ভিজিট করব। এ সময় পরিচ্ছন্নকর্মী কম দেখতে পেলে কিন্তু অ্যাকশনে চলে যাব। প্র্যাক্টিক্যালি যদি কোনো পরিচ্ছন্নকর্মীকে না দেখি তাহলে ধরে নেব, তারা স্বাক্ষর করে চলে যায়, কাজ না করে টাকা নেয়; যেটা লোকমুখে শুনি সেটা বাস্তবে ধরে নিব। কাজেই এ ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবেন।

পরিচ্ছন্নকর্মীদের মেয়র বলেন, আমি ফ্যাসিলিটি বাড়িয়ে দেব। ধীরে ধীরে স্থায়ী করছি। কিন্তু আপনাদের কাজের গতিও বাড়াতে হবে। পরিচ্ছন্ন বিভাগকে আরো অ্যাক্টিভ হতে হবে। তিনি বলেন, ময়লা অপসারণ নিয়ে আমি এখনো সন্তুষ্ট না। ডোর টু ডোরের যারা কাজ পেয়েছে তাদের কাজ করতে এক দেড় মাস সময় লাগবে। এরা আছে বলে আপনার চুপ মেরে থাকবেন তা হয় না। কোনো এক জায়গায় ময়লা দেখলে আপনাদের নিয়ে আসতে হবে।

মেয়র বলেন, আমি শুনেছি, অনেক জায়গা থেকে আপনারা ডাস্টবিন নিয়ে এসেছেন। অনেকে আমাকে বলেছে, আগে ডাস্টবিন ছিল এখন নেই, আমরা ময়লা ফেলতে পারছি না। ডোর টু ডোর দেওয়ার কারণে আপনারা ডাস্টবিন নিয়ে আসবেন? ডাস্টবিন ডাস্টবিনের জায়গায় থাকবে। কেউ না কেউ তো ময়লাগুলো ফেলবে এক জায়গায়। কোথায় ফেলবে? কাজেই যে যে ওয়ার্ডে আপনারা ডাস্টবিন সরিয়েছেন, আপনারা ওই স্ব স্ব জায়গায় ডাস্টবিনগুলো দিয়ে আসবেন। আমি চাই, কোনো কারণে ডোর টু ডোর ফেল করলে আপনাদেরকে সেখানে কাজ শুরু করতে হবে। কারণ ডোর টু ডোরের লোকগুলো আমার কর্মকর্তা না। আপনারাই আমার। আপনারা আমার মেইন ফোর্স, যারা এই শহরটাকে সুন্দর রাখবেন। এখানে যদি আমি ফেল করি তাহলে আমি ফেল।

শাহাদাত বলেন, আমাদের পরিচ্ছন্নকর্মী তিন হাজার ৮৮০। প্রায় চার হাজারের কাছাকাছি এসব পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা–কর্মচারী যদি ওয়ার্ডভিত্তিক ঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে কিন্তু ময়লা থাকার কথা না। তিনি বলেন, ময়লা নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় পড়ে যাচ্ছে। আমি নিজে দেখেছি, গাড়ির উপর কাভার নেই। ময়লার গাড়ির উপর কাভার থাকবে না কেন? কেন যেতে যেতে ময়লা রাস্তায় পড়বে? দিন শেষে ওই ময়লাগুলো তো নালায় যাচ্ছে।

সভায় প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, জনবল পর্যাপ্ত থাকলেও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে গতি আনতে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির ঘাটতি আছে। তাছাড়া কার্যক্রম তদারকির জন্য নির্দিষ্ট গাড়ির অভাবেও অনেক সময় কাজে বিঘ্ন ঘটে।

চট্টগ্রামের সবজির বাজারে উত্তাপ ,মাছ মুরগির দাম বেড়েছে

ময়লা বিষয়ে অভিযোগ পাচ্ছি। আগামী ১৫ দিনে ঠিক না হলে ব্যবস্থা। চট্টগ্রাম সিটি মেয়র

মোঃ সিরাজুল মনির ,

চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান,

সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে চাহিদা বেশি থাকার কারণে অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকে চট্টগ্রামের কাঁচাবাজারগুলোতে সবজির দামে উত্তাপ ছড়িয়েছে। দাম বেড়েছে মাছ ও মুরগিতে।

চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন বাজার পরিদর্শনে দেখা যায় কাঁচা শাকসবজিতে প্রায় ১০ টাকা করে বেড়েছে প্রতি কেজিতে। সিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি টমেটো একশ ৪০ টাকা করলা ১০০ টাকা কাকরোল ১০০/১২০ টাকা বেগুন ৮০ টাকা ঝিঙ্গা ৭০/৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, লাউ প্রতি কেজি ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ টাকা, চিচিঙ্গা৬০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, অন্যান্য সবজি অবস্থা বুঝে অতিরিক্ত মূল্য নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। নগরীতে এক বাজারের সাথে অন্য বাজারের মূল্যের কোন মিল নাই যেখানে যেমন ইচ্ছা পারতেছে অতিরিক্ত মূল্য নিচ্ছে একটা ক্রেতাদের কাছ থেকে। কোন বাজারে মনিটরিং ছেলের ব্যবস্থা না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা যেমন ইচ্ছা তেমন মূল্য নির্ধারণ করে। বাজারগুলোতে প্রায় সময় ক্রেতা বিক্রেতা ঝগড়া লেগেই থাকে মূল্য নিয়ে। বাজারে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে অনৈতিকভাবে মূল্যবৃত্তি করে যাচ্ছে বলে ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন হওয়ায় এই সুযোগকে আরও বেশি করে কাজে লাগিয়েছে ব্যবসায়ীরা। অতিরিক্ত চাহিদা থাকার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজি থাকলেও অবৈধ মুনাফা লোভীরা যেমন ইচ্ছা তেমন দাম হাঁকাচ্ছে।

অপরদিকে দিনের ব্যবধানে মাছ মুরগির দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১০/২০ টাকা। একদিন আগেও বয়লার মুরগির দাম কেজি ১৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল আজকে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫ টাকায়। মাছের বাজারে সাইজ এবং রকম বুঝে অতিরিক্ত মূল্য নিচ্ছে মাছ ব্যবসায়ীরা।

সাধারণ হতাশাগ্রস্ত হয়ে বলেন কোন বাজারে জেলা প্রশাসনের মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা যেমন ইচ্ছা তেমন দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। কোন পণ্যের সংকট না থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের সময়ে এসেও সিন্ডিকেট প্রথা চালু থাকার কারণে সাধারণ ক্রেতারা এদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। কেউ কোন জায়গায় প্রতিবাদ করে এর প্রতিকার পাচ্ছে না। এ বিষয়গুলো যেন দেখার কেউ নেই।

শ্রীপুরে নবগঠিত তেলিহাটি বিএনপি নেতা শাহজাহানকে ফুলেল শুভেচ্ছা

ময়লা বিষয়ে অভিযোগ পাচ্ছি। আগামী ১৫ দিনে ঠিক না হলে ব্যবস্থা। চট্টগ্রাম সিটি মেয়র

স্টাফ রিপোর্টার: এম দেলোয়ার হোসেন মৃধা

গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় নবগঠিত তেলিহাটি ইউনিয়ন বিএনপির ১নং যুগ্ম আহবায়ক জনাব শাহজাহান মোড়লকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়েছে। এ উপলক্ষে স্থানীয় নেতাকর্মীরা ফুলেল শুভেচ্ছায় তাকে বরণ করে নেন।

রবিবার (তারিখ) বিকেলে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় মজনু ফকির সুপার মার্কেটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কার্যালয়ে এ আয়োজন হয়। অনুষ্ঠানে পৌর শ্রমিক দল নেতা মজনু ফকিরের নেতৃত্বে শ্রীপুর বিএনপি, তেলিহাটি ইউনিয়ন বিএনপি, পৌর শ্রমিক দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

নবনিযুক্ত যুগ্ম আহবায়ক শাহজাহান মোড়লকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে উপস্থিত নেতাকর্মীরা সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে একযোগে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সরেজমিন হালদা নদী পর্ব (১)

দেশের বৃহৎ রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র হালদা

ময়লা বিষয়ে অভিযোগ পাচ্ছি। আগামী ১৫ দিনে ঠিক না হলে ব্যবস্থা। চট্টগ্রাম সিটি মেয়র

মোঃ সিরাজুল মনির,

চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান।

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি চট্টগ্রাম। পাহাড়, সাগর ও নদীবেষ্টিত এ চট্টগ্রাম আরও সমৃদ্ধ হয়েছে হালদা নদীর অনন্য বৈশিষ্ট্যের গুণে। হালদা নদী বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র। এটি পৃথিবীর একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী যেখান থেকে সরাসরি রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। পৃথিবীর আর কোন জোয়ার-ভাটার নদী থেকে সরাসরি ডিম আহরণের নজির আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এ কারণে হালদা নদী বাংলাদেশের জন্য এক বৈশ্বিক উত্তরাধিকারও বটে। অথচ দেশের নদী সম্পর্কিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দলিল কিংবা ইতিহাসে এ নদীর নাম অনেকটা অনুচ্চারিত।

অপার জীববৈচিত্র্যময় ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এ নদী জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রেখে আসছে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে। রুই জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) পোনার জন্য এ নদীর আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকলেও এটি যোগাযোগ, কৃষি ও পানি সম্পদেরও একটি বড় উৎস। প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি গ্যালন পানি উত্তোলন করে চট্টগ্রাম ওয়াসা শহরের সূপেয় পানি সরবরাহ করে এ নদী থেকে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ যে কয়েকটি প্রাকৃতিক সম্পদ বাংলাদেশে রয়েছে তার মধ্যে হালদা অন্যতম। আগে বাংলাদেশ ছাড়াও হালদার পোনা ভারত ও মিয়ানমারে রপ্তানী হতো। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, বাঁক কাটা, মা-মাছ শিকার, নদী দূষণ, সরকারের উদসীনতাসহ মানবসৃষ্ট নানা কারণে প্রাকৃতিক এ মৎস্যভান্ডার এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। এর ফলে প্রতি বছর মা-মাছের ডিম ছাড়ার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে।

হালদা নদীর উৎপত্তি:

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় উপজেলার পাহাড়ী ক্রীক থেকে দেশের মৎস্য খনিখ্যাত হালদা নদীর উৎপত্তি। এই নদী চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রায় ৯৮ কি.মি. (উৎস থেকে কালুরঘাট সরাসরি দূরত্ব প্রায় ৫৭ কি. মি.) পথ অতিক্রম করে চট্টগ্রাম শহরের কালুরঘাট নামক স্থানে কর্ণফুলী নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। ফটিকছড়ির উপর দিয়ে দেশের গর্ব এ নদীর অধিকাংশ পথ (৪০ কি.মি.) অতিক্রম করেছে। এ নদীর পানির প্রধান উৎস মূলত: ফটিকছড়ি উপজেলার অসংখ্য পাহাড়ী ছড়া। ছড়াগুলো নদীর মূল স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়ে হালদাকে বৈশিষ্ট্যময় নদী হিসেবে এখনো সমৃদ্ধ করে রেখেছে।

হালদা নদী গুরুত্বপূর্ণ কেন?

হালদা নদী বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রুই জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল এবং কালিগনি) প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র। এটিই দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র যেখান থেকে সরাসরি রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশের রুই জাতীয় মাছের একমাত্র বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক জিন ব্যাংক। এই প্রাকৃতিক জিন পুল বাঁচিয়ে রাখার জন্য হালদা নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রগুলিতে ইনব্রিডিং-এর কারণে মাছের বৃদ্ধি মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে এবং বামনত্ব, বিকলাংঙ্গতাসহ বিভিন্ন ধরনের জিনগত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দ্রুত বর্ধনশীল বড় আকারের রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিগনি মাছ এক সময় রূপকথার গল্পের মত মনে হবে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য হালদা নদীর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের বিকল্প নেই। এজন্য বর্তমানে মৎস্যচাষী ও হ্যাচারি মালিকেরা রেণু পোনার জন্য আবার হালদার পোনার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। হালদা একমাত্র নদী যেখান থেকে আহরিত ডিম স্মরণাতীত কাল থেকে স্থানীয় জ্ঞানের মাধ্যমে প্রাচীন পদ্ধতিতে নদীর পাড়ে খননকৃত মাটির গর্তে (কুয়ায়) ফোটানো হয় এবং চারদিন লালন করে রেণু পোনা (ঋরংয ঋৎু) তৈরি করা হয়। এ নদীর রুই জাতীয় মাছের বৃদ্ধির হার অন্যান্য উৎসের মাছের তুলনায় অনেক বেশি (যেমন কাতলা বৎসরে ২.০-২.৫ কেজি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়)। এতে মৎস্যচাষী এবং হ্যাচারি মালিকেরা হালদা নদীর রুই জাতীয় মাছের চাষ কিংবা প্রজনন ঘটিয়ে বেশি লাভবান হতে পারে। ব্রিটিশ আমলে সারা দেশের ২/৩ অংশ পুকুরে মৎস্য চাষ তথা একোয়াকালচার হালদার পোনা দিয়েই করা হতো। এমনকি ভারত এবং মিয়ানমারেও হালদার পোনা চাষের জন্য নিয়ে যেত। বর্তমানেও পরিকল্পিতভাবে হালদা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব। বর্তমান বাংলাদেশের প্রায় ৮ শতাধিক কার্প হ্যাচারি (রেণুর চাহিদা ২ লক্ষ কেজি প্রায়) তথা বাংলাদেশের একোয়াকালচার এবং বায়োডাইভার্সিটি বাচিঁয়ে রাখার জন্য হালদার প্রাকৃতিক উৎসের গলদা চিংড়ি ও মেজর কার্পের পোনার গুরুত্ব অপরিসীম।